• ঢাকা
  • রবিবার , ১৩ জুলাই ২০২৫ , ভোর ০৪:৪৩
  • ২৮ আষাঢ়, ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / সারাদেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে "স্বরব্যঞ্জন" এর আয়োজনে হৃদয়ছোঁয়া এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

রিপোর্টার : দৈনিক আলোর সকাল
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে "স্বরব্যঞ্জন" এর আয়োজনে হৃদয়ছোঁয়া এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ

ফয়সাল আজম অপু, স্টাফ রিপোর্টারঃ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাংস্কৃতির আলোয় আলোকিত সত্রাজিতপুরে অনুষ্ঠিত হলো এক হৃদয়গ্রাহী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। যেখানে লোকসংগীত ও কবিতা আবৃত্তির সুরে প্রাণ ফিরে পেল বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। বাউল ও লোকসংগীত ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান "স্বরব্যঞ্জন" এর আয়োজনে শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টাব্যাপী এই মনোমুগ্ধকর আয়োজনে মেতে উঠেছিলো স্থানীয় জনপদ। আয়োজনের পেছনে ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার আবৃত্তি ও উপস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক এবং স্বরব্যঞ্জনের পরিচালক কাব্য মোল্লাহ। তাঁর সৃজনশীল নেতৃত্বে এই সন্ধ্যায় একত্রিত হয়েছিলেন দেশের নানা প্রান্তের  শিল্পীরা—বাউল আজাহারুল ইসলাম, করিমোল্লাহ, ফেন্টু ইসলাম, কাওসার রিপন, সাধক সাদিকুল ইসলাম, প্রবীণ সংগীতশিল্পী আফতাব উদ্দীন,  আব্দুস সালাম টিপু এবং উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী চিশতি ফারজানা নাইমা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট সাংবাদিক সোনামসজিদ প্রেসক্লাব চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর সভাপতি ও এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল আজম অপু। তিনি সংগঠনটির কর্ণধার কাব্য মোল্লাকে ধন্যবাদ জানান এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। তিনি বলেন, অনেকে মনে করে সাংস্কৃতিক কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করা মানে সময় নষ্ট করা। কর্ম জীবনে ব্যাঘাত ঘটে, আসলে এটা ভুল ধারণা। বরং সুস্থ বিনোদনে সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোতে কাজ করার মাধ্যমে সাংস্কৃতিকভূবনে ইতিবাচক গুণাবলি তৈরি হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে। নেতৃত্বগুণ তৈরি হয়।  একজন সাংস্কৃতিক সংগঠন করা ব্যক্তি “সংগঠন না করা” ব্যক্তির চেয়ে আলাদা। সাংস্কৃতিক সংগঠন মানুষকে সহনশীলতা শেখায়, নম্রতা ভদ্রতা এবং সামাজিক মানবিক প্রক্রিয়ায় মিলে মিশে, একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। অসামাজিক কার্যক্রম থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠন করা ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনে মূল্যবোধ বা আদর্শের স্লোগান থাকে।  সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে সাংগঠনিক ব্যক্তি যেমন নিজেকে বিকশিত করতে পারে, তেমনি সামাজিক সুস্থতায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে সমাজে, তবে লক্ষ্য হতে হবে সাংস্কৃতির মাঝেও আদর্শিক ও সমাজ কল্যাণ সেবামূলক কাজ তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বরব্যঞ্জন এর পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।  তার উপস্থিতিতে, কবিতার আবেশ ছড়াতে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি আনিফ রুবেদ, আশরাফুল ইসলাম, ইহান আরভীন, ওমর ফারুক সেলিম এবং লেখক তারিখ মাহমুদ। আরো উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা শফিকুল আলম। এছাড়াও ‘হৃথিবী রথ’, ‘অনির্বাণ’, ‘বাউল ভক্তকুল’সহ বিভিন্ন স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে কাব্য মোল্লাহ বলেন, “শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড, তেমনি সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চা হলো সেই শিক্ষার প্রাণ। হারিয়ে যাওয়া লোকসংগীতের পুনর্জাগরণ ও বাউল ঐতিহ্যের সম্মিলনই আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।” আলোচনায় উঠে আসে আবৃত্তির আধুনিক রূপ এবং লোকজ সংগীতের নতুন উপস্থাপনাভঙ্গির কথা। শিল্পীরা নিজেদের স্বকীয়তায় পরিবেশন করেন একাধিক লোকগান ও আবৃত্তি, যা দর্শকদের আবেগে ভাসিয়ে তোলে। প্রতিটি পরিবেশনা ছিল অনন্য, ছিল হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক অভিজ্ঞতা। এই সন্ধ্যা কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং ছিল বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক গর্বিত উচ্চারণ—একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ। তরুণ প্রজন্মের মাঝে শিকড়চেতনা ও সাংস্কৃতিক মনন গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্যকে তুলে ধরাই ছিল এই আয়োজনের অন্তরস্থ দর্শন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এমন এক সন্ধ্যা বহুদিন মনে গেঁথে থাকবে। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে এমন আয়োজনে প্রাণ ফিরবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চায়।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আরও পড়ুন