ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরেই একটি বিশেষ মহল এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের রায়টা-মহিষকুন্ডি বেরিবাঁধের পাশেই এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গনের ফলে প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীনের পথে।
এদিকে বালু উত্তোলনের ফলে শুষ্ক মৌসুমের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঙ্গনে হুমকিতে রয়েছে এলাকার বসতবাড়ি,সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাইটা-মহিষকুন্ডি নদী রক্ষা বাঁধ।
স্থানীয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর অসম্মতি সত্ত্বেও রাইটা-ফয়জুল্লাহপুর ঘাটে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এই বালু তোলার ফলেই এখানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।এর আগেও এই অঞ্চলে নদী ভাঙ্গনে শতশত একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে ব্যবস্থা নিলেও অদৃশ্য কারণে তা আবার চালু হয়ে যায়। বর্তমানে নদীর এই অংশে ভাঙ্গন কবলিত স্থান থেকে নদী রক্ষা বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৬০ মিটার।কিছু জায়গায় আরো কম। এই অঞ্চলের বসতবাড়ি থেকেও নদীর দূরত্ব মাত্র ১০০ গজ। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে গভীর আতঙ্ক আর উদ্বেগ। যদি কোন কারনে এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে বর্ষা মৌসুমে পুরো কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইবাদত আলী জানান, তার মোট ৭বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারে আরও দেড় বিঘা বিলীন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে গোটা এলাকায় বিলীন হয়ে যাবে।তখন লাখো মানুষকে ঘরছাড়া হতে হবে।
জুনিয়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান জানান,গত বৃহস্পতিবার ফয়জুল্লাহপুর নদী রক্ষা বাঁধের পাশে বেশ কিছু জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শুনেছি।নদী তীরবর্তী এলাকা রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।
ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, গত শুক্রবার আমি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। আগামী ১৩ই এপ্রিল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ইজারার খাস কালেকশন(বালু উত্তোলন) চলবে। আশা করি আগামী মৌসুমে এই অঞ্চলের বালু মহলের ইজারা স্থগিত হবে।কারণ সরকারি রাজস্বের চেয়ে জনজীবনের স্বার্থ দেখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জেলায় অনুরোধ করেছি, এবার যেন ইজারা চালু করা না হয়। আমরা খুব শীঘ্রই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাদের কার্যক্রম তরান্নিত করার আহ্বান জানাবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষেই বলতে পারব কি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে বালু উত্তোলনের ফলেই সাধারণত নদীর তীরবর্তী এলাকা ও নদী রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।