• ঢাকা
  • মঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৫ , রাত ০১:১৭
  • ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / সারাদেশ

স্বপ্ন বুনন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

রিপোর্টার : দৈনিক আলোর সকাল
স্বপ্ন বুনন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ

লেখিকা: ফাইজা রহমান অনু  

আমি ফাইজা । পড়তে, লিখতে এবং বুদ্ধিমান মানুষদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আমি কোনো কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না। নিজের দেশকে অত্যাধিক ভালোবাসি এবং সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি। আমি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দাবি করি। কেউ যদি তা নিয়ে সন্দেহ করে, সেটা তার সমস্যা। কারণ, খারাপটা তো সবাই বলবে, কিন্তু ভালোটা খুব কম মানুষই বলে।


আমি সর্বপ্রথম নিজেকে ভালোবাসি। নিজেকে সময় দিই। মন খারাপ থাকলে লিখতে বসি, কারণ আমাকে কাঁদাতে তো কেউ আসবে , কিন্তু হাসাতেও কেউ আসবে না।


আট মাস ধরে একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছি—স্বপ্ন বুনন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। আজ আমাদের ফাউন্ডেশনের তিন বছর + হলো। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। ময়মনসিংহ শহরে এখন অনেকেই আমাদের চিনে—এটা আমাদের পরিশ্রমের ফসল। তবে এই সাফল্য কারো একার নয়—এটা আমাদের ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সদস্যের সম্মিলিত অর্জন।


এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ০২/০৯/২০২২ সালে, আমাদের ফাউন্ডেশনের এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে। আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ভাইয়া, এই জার্নিটা কিভাবে শুরু করেছিলেন?” তিনি বলেছিলেন, “যখন তুমি কোনো কিছু শুরু করবে, তখন পাশে কেউ থাকবে না। আমারও তেমনি হয়েছিল। তখন আমরা মাত্র দুজন ছিলাম, ক্লাস নিয়েছি বাচ্চাদের। তারা ছিল বস্তির পোলাপান। কোনো স্কুল তাদের ভর্তি নিতে চাইত না, ভাবত তারা মারামারি করবে।”


তখন আমি নিজে তাদের ধরাধরি করে ১১৭ নম্বর সেহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। নিজের স্ট্যাম্পে সই করে তাদের দায়ভার নিয়ে ভর্তি করাতে হয়েছে।


আমি উজ্জ্বল—কয়েক বছর আগের এক গল্প। তখন আমার কাছে পাঁচ টাকাও ছিল না। মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে যে যন্ত্রণা ও বেদনা, সেটা আমি নিজের জীবনে অনুভব করেছি। তিন মাস একবেলা খেয়ে চলেছি। এমনও হয়েছে, চরপাড়া থেকে টাউন হল হেঁটে যেতে হয়েছে। একটি শার্ট দিয়ে এক মাস পার করেছি।


একবার এক ভাতের হোটেলে কাজ নিতে গিয়েছিলাম। ওরা আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে খাবার খাওয়াইয়ে বিদায় করে দেয়, কিন্তু কোনো কাজ দেয়নি। আমার জীবনে ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয় এই যন্ত্রণাময় অধ্যায়। প্রত্যেকটা ঈদ কেটেছে একা, পুরনো জামাকাপড় পরে। মা-বাবা না থাকলে পৃথিবীটা কতটা অমানবিক, বাস্তবতা কতটা কঠিন—সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।


এই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই আমি সিদ্ধান্ত নিই—সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করব। আমি যেভাবে পড়াশোনা করতে পারিনি, ওদের যেন সেভাবে আটকে থাকতে না হয়।


আমাকে ভাইয়া বলেছিলো জানো ফাইজা যখন আমি ফাউন্ডেশনটি খুলি, তখন অনেকে বলেছিল—“রেজিস্ট্রেশন করো, ৩০০-৫০০ টাকা দিলেই হবে। তাহলে নাম হবে, মানুষ চিনবে।” আমি বলেছিলাম, “তার দরকার নেই। আমরা এমন কাজ করব, যাতে আমাদের চিনবে কাজের মাধ্যমেই।” আর এখন তাই হয়েছে। ময়মনসিংহের অন্য অনেক ফাউন্ডেশনের মধ্যেও আমাদের স্বপ্ন বুনন ফাউন্ডেশন এখন সবার মুখে মুখে। এটা এক অন্যরকম ভালোবাসার নাম।


আজ হঠাৎ তিন বছর আগের আমি আর এখনকার আমিকে নিয়ে ভাবছি। তখনও আত্মনির্ভরশীল ছিলাম না, অনেক ইম্যাচিউর ছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারি—মানুষের জন্য, দেশের জন্য কিছু করা দরকার। আমারও দায়বদ্ধতা আছে আমার জন্মভূমির প্রতি।


জানি না কতটা করতে পারছি, তবে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে মানুষের সেবায়, দেশের সেবায় থাকার চেষ্টা করছি এবং ভবিষ্যতেও করব, ইনশাআল্লাহ।


এই বাচ্চাগুলোকে মানুষ করার চেষ্টাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। তারা বড় হচ্ছে রেল কলোনিতে, নিয়ম-কানুন বোঝে না বললেই চলে। তবে ওদের একটু শিক্ষা দিয়েও যদি সমাজের মূলস্রোতে আনা যায়, তবে আমি গর্বিত হবো—আমার এই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য।


স্বপ্ন বুনন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ  

স্বপ্ন বুনন পাঠশালা  

স্থান: ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন, নাটর ঘরলেন বস্তির পূর্ব পাশে।যদি কেউ আমাদের ফাউন্ডেশনে ক্লাস নিতে চান আসতে পারেন। 


আলহামদুলিল্লাহ, জীবনের যুদ্ধটা শুরু করেছিলাম নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আর আশেপাশের অসহায় মানুষগুলোকে একটু ভালো রাখার জন্য।  

যুদ্ধটা এখনও চলছে। জানি না কতদূর যেতে পারব, হয়তো একদিন এই যুদ্ধ থেমে যাবে। তবে ইচ্ছা আছে—নিজের যুদ্ধের কিছু চিহ্ন অন্তত রেখে যেতে পারি।


আপনাদের সহযোগিতা, ভালোবাসা, এবং পাশে থাকার কারণেই আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।  

আপনারা সবাই আমাদের পাশে থাকবেন, সহযোগিতা করবেন—এই আশা রাখি।


**অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে, সবে তো শুরু।  

আমার বিশ্বাস আমি, আমরা পারব✊  

লেখা , (ফাইজা রহমান অনু)  

আমাদের এই সুবিধা বঞ্চিত বাচ্চারা একদিন আলোর পথ দেখবে, তারাও বড় হবে।**

**#Swapnobunonfoundationbd**


সারাবাংলা

আরও পড়ুন