ই-পেপার/প্রিন্ট ভিউ
মো: আজিজুর বিশ্বাস,স্টাফ রিপোর্টার।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় কৃষক খাজা মোল্যা হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি ইতনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ শেখসহ সব আসামিদের গ্রেফতার ও দল থেকে পলাশ শেখ কে বহিষ্কারের দাবিতে দলীয় নেতাকর্মী ও ইতনা ইউনিয়নবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
রোববার (২৫ মে) বিকালে প্রথমে ইতনা বাজারে স্থানীয় বিএনপি অফিসের সামনের সড়কে ইতনা ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
অন্যদিকে একই ঘটনায় কুমোরডাঙ্গা ,ও পারইচাখালী সহ ইউনিয়ন বাসী মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল ও ঝাড়ু মিছিল করেন।
ইতনা ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বাজারের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য দেন- লোহাগড়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি রইচ উদ্দিন পলু, ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি পান্নু মুন্সি, ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মো:রাকিব হোসেন, ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্যা আব্দুর রহমান,স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হিরোসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রইচ উদ্দিন পলু বলেন,বিএনপি এক বৃহৎ ঐক্যের দল।এ দলে স্থানীয় পর্যায়ে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে ইতনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ শেখ, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। খাজা মোল্যা নিরীহ একজন মানুষ ছিল,তাকে হত্যা করার মাধ্যমে পলাশ ও তার বাহিনী নিজেদের সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। নিরীহ মানুষদের ওপর জুলুম, নির্যাতনে তুষ্ট না হতে পেরেই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কার দাবি করি।
মানববন্ধনে দলীয় নেতাকর্মীরা নিহত খাজা মোল্যাকে তাদের কর্মী দাবি করে বক্তব্যে আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ইতনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই পলাশ শেখ। চাঁদাবাজি,জমি দখল সবই করেছেন তার অনুসারী আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা তথা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির অনুসারী নব্য কথিত বিএনপি কর্মীদের নিয়ে। তার (পলাশ শেখের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মুখ খোলার সাহস নাই। দলের ভাবমূর্তি বাঁচাতে এমন চরিত্রের মানুষদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি করছি। সাথে বিএনপি কর্মী খাজা মোল্যা হত্যায় জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারে দাবি জানান বক্তারা।
অন্যদিকে এর আগে একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইতনা ইউনিয়ন বাসীর আয়োজনে পার-ইছাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওই এলাকার কয়েকশত নারী-পুরুষ অংশ নেন। খাজা মোল্যা হত্যায় আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
মানববন্ধনকারীরা বলেন,স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ইতনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহাদুল শেখের সঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইতনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ শেখের বিরোধ চলে আসছিল। একপর্যায়ে গত বুধবার (১৪ মে) সকালে পার-ইচাখালী থেকে পার্শ্ববর্তী কুমারডাঙ্গা বাজারে চা খেতে যায় খাজা মোল্যা৷ সেখানে খাজা মোল্যাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ পলাশ শেখ ও তার লোকজন। পরে তারাই আবার খাজার মরদেহ লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে দ্রুত খাজার মরদেহের কাছে ছুটে যান ছোট বোন সুমি। তখন হত্যাকারীরা সুমির কাছে খাজা মোল্লার মরদেহ ফেলে ওখান থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় গত ১৭ মে সকালে লোহাগড়া থানায় খাজা মোল্লাকে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন ভাই আলী হায়দার মোল্যা। মামলায় ইতনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য পলাশ শেখসহ আরও ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় শেখ নিয়ামুল ইসলাম ও হোসাইন শেখ নামের দুই আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকি আসামিরা এখনও ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়েছে।
নিহত খাঁজার ভাই আলি হায়দার ও ভাবি রুমা খানম বলেন, খাজা একজন নিরীহ কৃষক ছিলেন। কোনো দল-দরিয়াত করত না। নির্মমভাবে তাকে হত্যার ১০ দিন পার হলেও বড় কোনো আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি৷ প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। আমরা আসামিদের ফাঁসি চাই।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: শরিফুল ইসলাম বলেন খাজা মোল্লা হত্যার ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, এবং দুজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।