ফয়সাল আজম অপু, স্টাফ রিপোর্টারঃ
দীর্ঘদিন ধরে তারা ভারতে বসবাস করছিল। সম্প্রতি তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয় বলে তাদের দাবি। তাই নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে ধরা দেয় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ১৭ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে। সোমবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভীষণ সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়।
ফিরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ৪ নারী ও ৯ জন শিশু রয়েছে। তারা হলো—মফিজুল হক (২৬), মনজু বেগম (২২), মিতু আক্তার (১৩), বেলাল (৪), মরিয়ম (দেড় বছর), ববিতা বেগম (৩৪), রফিয়া বেগম (৬০), শাহাজুল ইসলাম (৪২), মামুন মিয়া (১৮), মাসুদ (১৩), রিদয় ইসলাম (৪), শ্রী বুলু চন্দ্র সেন (৪০), শ্রীমতি সুনোতি রানী (৩৪), শ্রী সুশান্ত চন্দ্র (৮), শ্রী সুমন চন্দ্র বর্মন (৬), শ্রী গোপাল চন্দ্র বর্মন (৪), শ্রী বুলবুলি চন্দ্র বর্মন (১৬)। তাদের সবার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানায়।
মঙ্গলবার ভোরে তাদের উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিভিষণ সীমান্তের লালমাটিয়া নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৬ বিজিবি) বিভীষণ বিওপির সদস্যরা আটক করে। পরে বিকালে গোমস্তাপুর থানা পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ, বিজিবি ও পুশইন হয়ে আসা নাগরিকেরা জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে কাজ করত। গত ১৭ মে ভারতীয় পুলিশ তাদের হরিয়ানা প্রদেশ থেকে আটক করে ট্রেনযোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে বাসযোগে গত ২৪ মে সন্ধ্যায় ভারতের ৮৮ বিএসএফের ইটাঘাটা ক্যাম্পের কাছে তাদের হস্তান্তর করে। সোমবার রাতে বিএসএফ তাদের বিভীষণ সীমান্তের ২১৯/৭১ আর পিলারের কাছ দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে।
পুশইন করা একজন শ্রী বুলু চন্দ্র বর্মন বলেন, মোদি সরকার বাংলাদেশিদের সেখানে থাকতে দিচ্ছে না। অনেক নির্যাতন করছে। তাই দিল্লি পুলিশের কাছে আমরা স্যালেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করি। পরে দিল্লি পুলিশ হাওড়া কুচবার স্টেশন থেকে বাসে করে নিয়ে এসে আমাদের বিএসএফ ক্যাম্পে রাখে। সেখানে এক দিন রেখে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বর্ডার পার করে ছেড়ে দেয়। তারপর রাতের অন্ধকারে কিছু চিনতে না পেরে একটা জায়গায় সবাই মিলে বসে ছিলাম। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে নদী পার হয়ে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করি।
গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান তারেক বলেন, বিজিবি ১৭ জন বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে। আমরা তাদের পেয়েছি। তারা আমাদের যে ঠিকানা দিয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তাদের পরিবার-পরিজন আসবে। তারপর আমরা যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হলে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।
তিনি আরও বলেন, যদি এই ১৭ জনের মধ্যে কেউ বাংলাদেশি নাগরিক না হয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।