নিজস্ব প্রতিবেদক
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার একটি ছোট্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় — গজন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানেই এক শিশুর ভেতর ধীরে ধীরে জন্ম নিচ্ছিল এক নেতৃত্বের বীজ, একটি সাহসী মনন, আর একজন দেশপ্রেমিক স্কাউট। তার নাম তাহমিন ইসলাম আদিব।
এই ছোট্ট শিশুটি শুধু বইয়ের পাতায় আটকে থাকেনি। সে বেরিয়ে পড়েছিল জানার, শেখার, আর মানুষের উপকারে আসার পথে। আর এই পথেই সে অর্জন করেছে বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ কাব স্কাউট স্বীকৃতি — ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’।
আদিব স্কাউটিংয়ের শুরুতেই দেখিয়েছিল আলাদা কিছু। উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক—প্রতিটি ধাপে সে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে। তার দক্ষতা আর মানবিক মানসিকতার কারণে সে মনোনীত হয় জাতীয় পর্যায়ে ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য।
স্কাউটিংয়ের প্রতিটি শিখর সে স্পর্শ করেছে—ক্যাম্পিং, কাব কার্নিভাল, ব্যাজ অর্জন, সেবামূলক কর্মকাণ্ড, সবখানেই সে ছিল সবার আগেই।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক গৌরবময় আয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ হাতে আদিবের হাতে তুলে দেন ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’।এ যেন শুধু একটা পদক নয়, আদিবের সংগ্রাম, নিষ্ঠা আর নেতৃত্বের এক শক্ত স্বীকৃতি।
আদিব বলেন,“আমি এ পুরস্কার পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। এটি আমার আত্মবিশ্বাস ও মানবিক চেতনাকে আরও জাগিয়ে তুলেছে। স্কাউটিং আমাদের শেখায় কিভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়, কিভাবে সমাজের পাশে দাঁড়াতে হয়।”
সে শুধু কথায় নয়, কাজে তা প্রমাণও করেছে।
সূর্য গ্রুপের অধীনে সে অংশ নিয়েছে ৪০টিরও বেশি কার্যক্রমে—পরিবেশ সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও পশুপালন, সমাজসেবা, রান্না, চিত্রকলা, কম্পিউটার, প্রাথমিক চিকিৎসা, খেলাধুলা—আরও কত কী!
আদিব এর আগেও ২০২৪ সালে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ কাব স্কাউট এ দেশ সেরার গৌরব অর্জন করে
আদিব জানায়, এই অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে তার কাব লিডার রাজীব স্যার, স্কুলের শিক্ষকগণ এবং তার পিতা-মাতার নিরলস উৎসাহ।
তার মা ইসরাত জাহান বলেন:“স্কাউটিং হলো এমন এক মুক্তাঙ্গনের শিক্ষা, যা শুধু পরীক্ষার খাতায় ধরা পড়ে না। এটি শেখায় জীবনের সঠিক পথ।”
স্কুলের স্কাউট শিক্ষক রাজীব আহমেদ বলেন:“আদিবের মতো শিক্ষার্থী পাওয়া একজন স্কাউট লিডারের জন্য গর্বের। সে শুধু পুরস্কার জিতেনি, সে আমাদের আশার আলো হয়ে উঠেছে।”
স্কাউটিংয়ের জনক লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৮৯৯ সালে যে বীজ বপন করেছিলেন, আজ সেই চেতনাই আদিবের মধ্যে ফুটে উঠেছে।একজন কাব স্কাউটের জন্য ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ মানে শুধু প্রশংসা নয়—এটি দৃঢ়তা, নিয়মিত অনুশীলন, সেবামূলক মনোভাব ও নেতৃত্বের প্রতীক।
আজ আদিব শুধু গজন্দর স্কুলের নয়, সে গৌরীপুর, ময়মনসিংহ — এমনকি গোটা বাংলাদেশের গর্ব।
একজন শিশুর ভেতর যদি দেশের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ আর শেখার আনন্দ থাকে—তাহলে বয়স কোনো বাধা নয়।
তাহমিন ইসলাম আদিবের এই অসাধারণ যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, "ছোট ছোট পদক্ষেপ দিয়েই তৈরি হয় বড় সাফল্যের পথ।"
তোমার জন্য রইলো সালাম, আদিব। আগামী দিনের বাংলাদেশ তোমাদের হাতেই গড়া হবে।