হুমায়ূন কবীর ফরীদি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জগন্নাথপুরের সর্বত্র ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক এর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।যে বয়সে শিশুদের হাতে বইপত্র আর খেলার সামগ্রী থাকার কথা ঠিক এই বয়সে শিশুরা পরিবারের লোকজন এর মূখে একটু হাসি ফোটানোর লক্ষে টাকার রোজগার করতে লেগুনা -অটো টেম্পোতে টাকা লওয়ার কাজ করছে এবং ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালানো সহ বিভিন্ন রকমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক এর কাজ করছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো প্রকার মাথা ব্যাথা নেই বললেই চলে।
৩০শে জুন রোজ সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ও জানাযায়, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় যানবাহন চলাচল এর উপযোগী প্রায় সবকটি সড়ক সহ জগন্নাথপুর পৌর শহর এলাকায় প্রায় চার/পাঁচ শতাধিক ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা বয়সী শিশুরা নানা পেশায় শ্রমিক এর কাজ করছে। ওরা একেক জন একেক রকম কাজ অর্থাৎ ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালাচ্ছে। লেগুনা অটো টেম্পো জাতীয় যানবাহনে বাদুড়ের মতো ঝুলে ঝুলে যাত্রী সাধারণ এর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। এমনকি চায়ের স্টল সহ বিভিন্ন রকমের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে সকাল থেকে রাত প্রায় ৮ ঘটিকা পর্যন্ত কাজ করছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও প্রশাসনের চোখ এর সামন দিয়ে শিশু শ্রমিকরা অবাধে অটোরিকশা চালাচ্ছে। অটো টেম্পো গাড়ীতে বাদর ঝুলায় ঝুলে ভাড়া আদায় করছে।
অল্প বেতনে শিশু শ্রমিক খাটানো যায় বলেই অধিক মুনাফা লোভী অটোরিকশা মালিক ও লেগুনা- অটো টেম্পো চালকেরা এমনকি চায়ের স্টল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর মালিকেরা ওদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। যে বয়সে শিশুদের বইপত্র -কলম আর খেলার সামগ্রী থাকার কথা ঠিক এই বয়সে তারা অভাব অনটনের সংসারে মাতা-পিতাকে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে নানাবিধ কর্ম করছে।
এ ব্যাপারে জানতে একান্ত আলাপকালে শিশু শ্রমিক রাহেল, ইমন, বশীর সহ একাধিক শিশু শ্রমিক তাদের অভিপ্রায় ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলে,
এ ব্যাপারে একান্ত আলাপকালে শিশু শ্রমিক ইমন বলে, আমরা গরীব ঘরে জন্ম নিয়েছি। প্রত্যেকেরই ৪/৫ জনের পরিবারে বাবাই একমাত্র কর্মজীবী ব্যক্তি । তিনি যা রোজী করেন তা দিয়ে সংসার চলে না। যার ফলে মা- বাবার অভাব অনটনের সংসারে একটু হলেও সহযোগিতা করতে রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে আার দিবারাত্রি কাজ করতে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওরা আরও বলে, অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যেতে আমাদেরও মন চায়। স্কুলগামী সমবয়সীরা যখন ভাল কাপড় পড়ে বইখাতা নিয়ে স্কুলে যায় এবং পাশের বাসার শিশুরা যখন পড়তে বসে তখন আমাদের মনে খুব কষ্ট হয়। মনকে এই বলে মনকে শান্তনা দেই আমরা গরীব ঘরের সন্তান। আমাদের পরিবারের ছোট ছোট ভাই বোন স্কুলে পড়ছে। আল্লাহ সহায় থাকলে ওদেরকে লেখা-পড়া করানোর ইচ্ছা আছে।
এব্যাপারে বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী মোঃ আব্দুস ছালাম ও পল্লী চিকিৎসক মোঃ মিজানুর রহমান সহ একাধিক সচেতন নাগরিক তাদের অভিপ্রায় ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলেন, বেশি মুনাফা লোভী কিছু সংখ্যক লোক অল্প পারিশ্রমিকে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। আর হত-দরিদ্র মাতা-পিতা হৃদয়ে লুকানো ব্যাথা নিয়ে সংসারের অভাব অনটন তাড়াতে শিশুদের কাজে লাগিয়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদে শিশুরা যান্ত্রিক যানবাহনে, হোটেল -রেস্তোরাঁ এবং ছোট ছোট চায়ের স্টলে সকাল থেকে রাত অবদি সামান্য কিছু বেতনে শ্রমিক এর কাজ করছে। এই সকল শিশুশ্রম বন্ধ করার পাশাপাশি শিশু শ্রমিকদের স্কুলমূখী করার লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূছ সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।